বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইউটিউব দেখে ‘চেরি টমেটো’ চাষে মাসুদের সাফল্য

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

ইউটিউব দেখে ‘চেরি টমেটো’ চাষে মাসুদের সাফল্য

থোকায় থোকায় আঙুরের মতো ঝুলছে টমেটো। পুরো জমিজুড়েই শোভা পাচ্ছে লাল আর হলুদ লম্বাটে ছোট ছোট আকারের অসংখ্য টমেটো। ইতালির বিখ্যাত উন্নত জাতের দামি এই সবজিটির চাষ হয়েছে দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলা নওগাঁয়। ইউটিউব দেখে পরীক্ষামূলক এই জাতের টমেটো চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর রানীনগরের গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী গ্রামের উদ্যোক্তা মাসুদ রানা তুফান। প্রথমবারেই ভালো ফলন দেখে তার মুখে ফুটছে চওড়া হাসি।

মাসুদ তার ৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি জাতের এই টমেটোর চাষ করেছেন। ইউটিউবে ভিডিও দেখে এই চেরি টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। টমেটো চাষ করে প্রথমবারেই পেয়েছেন সাফল্য। তার এই সাফল্য দেখে স্থানীয় কৃষকরা ভিনদেশি এই টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে চেরি টমেটো। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় নতুন জাতের এই টমেটো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে তা গাঢ় লাল ও কমলা রঙ ধারণ করে থাকে। দেখতে খুবই সুন্দর, আকর্ষণীয়। এই জাতের টমেটো গাছ আকারে অনেক বড় ও মজবুত। প্রতিটি গাছ থেকে ৭-৮ কেজি টমেটো সংগ্রহ করা যায়। এই টমেটোর বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চারা উৎপন্ন সম্ভব।

এ বিষয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা মাসুদ রানা তুফানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত বিশ্বের উন্নত জাতের টমেটো। প্রথমে ইউটিউবে আমি এই চেরি টমেটো দেখি চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে লাল তীর নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে গত বছরের অক্টোবর মাসে বীজ সংগ্রহ করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজ বপন করি। পরবর্তীতে বীজ বপনের ২০ দিন পর চারা তুলে জমিতে রোপণ করি। রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকা শুরু হয়। এটি লম্বাটে আঙুরের মতো দেখতে। গাছটিও প্রচুর লম্বা হয়। থোকায় থোকায় টমেটো ধরে। এটির পুষ্টিও দ্বিগুণ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রথমবার হিসেবে আমার ফলনও ভালো হয়েছে।’

মাসুদ রানা বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই টমোটো বাজারজাত করবো। স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা না থাকায় ঢাকার সুপারশপগুলোতে এসব টমেটো বিক্রি করবো। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হবে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে। আমি সেখানে বিক্রি করবো বলে মনস্থির করেছি।’

নওগাঁ জেলার এই বাসিন্দা বলেন, ‘ভিনদেশি এই টমেটো উৎপাদনে সফল হয়েছি। যদি ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারি, তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এর চাষাবাদ করবো। এছাড়া আমার চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সবাই এই টমেটো চাষ করলে বাজারজাত করাও সহজ হবে। শতভাগ চেষ্টা থাকলে কৃষকদের ভাগ্য বদলে যেতে সময় লাগবে না।’

রানীনগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আহসান হাবিব জানান, বেলে মাটিতে শীতকালে চেরি টমেটোর চাষ করা হলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। মাসুদ রানা বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই চেরি টমেটো চাষ করেছেন। তিনি এখানে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ওপরে পলি নেট হাউস ও নিচে মালচিং পেপার বিছিয়ে এই টমেটো চাষ শুরু করেন। সে কারণে এখানে কোনো রকম কীটনাশক দেওয়ার দরকার হয় না।

বেলে মাটিতে শীতকালে চেরি টমেটোর চাষ করা হলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। মাসুদ রানা বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই চেরি টমেটো চাষ করেছেন। তিনি এখানে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ওপরে পলি নেট হাউস ও নিচে মালচিং পেপার বিছিয়ে এই টমেটো চাষ শুরু করেন। সে কারণে এখানে কোনো রকম কীটনাশক দেওয়ার দরকার হয় না।

কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব আরও বলেন, ‘এই টমেটো আমাদের দেশের টমেটোর মতো না। এই টমেটোর আকারে ছোট এবং দেখতে অনেক সুন্দর। আকর্ষণীয়। খেতেও অনেক সুস্বাদু ও বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। চেরি টমেটো যৌবন ধরে রাখার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাসুদ রানা তুফানকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়াও আশপাশের কৃষকরা এই চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা তাদেরকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।’

রানীনগর উপজেলার এই কৃষি অফিসার আরও জানান, ‘বর্তমানে চেরি টমেটো ঢাকার বিভিন্ন শপে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার মার্কেট গড়ে ওঠে নাই। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে চেরি টমেটো এই উপজেলায় আরও সম্প্রসারিত হবে। বেশি পরিমাণ উৎপাদিত হলে কৃষকদের বাজারজাত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। এতে তারা লাভবান হবেন’।

টিবি/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর