শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উত্তরাঞ্চলে নিয়মিত বন্যা হয় কেন?

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

উত্তরাঞ্চলে নিয়মিত বন্যা হয় কেন?
ফাইল ছবি

দেশের অন্যান্য জেলায় তুলনামূলকভাবে বন্যা কম হলেও উত্তরাঞ্চলে এটি যেন নিয়মিত ব্যাপার। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় প্রতি দু’এক বছর পরপরই বড় ধরনের বন্যা দেখা যায়। 

সবশেষ অবস্থা অনুযায়ী, ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানির ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো সেসব এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে রংপুর ও লালমনিরহাটের লক্ষাধিক মানুষ। বিশেষ করে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে অনেক এলাকায় তিস্তা নদীর পাশে দেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে বন্যার পানি ফসলি জমি এবং লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুরের গুনাইগাছির বাসিন্দা মনোয়ার হোসেনের দুই বিঘার ধান তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনও তার বাড়িতে পানি ওঠেনি। কিন্তু বন্যার পানি ঘরের নিচে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ক্ষেতের ধানের আশা তো ছাইড়েই দিছি। আর এক ফিট পানি উঠলে ঘর ছেড়ে স্কুলে চলে যাইতে হবে। গরুগুলোকে বড় রাস্তার ওপর একজনের বাড়িতে রাইখে আইছি। 

মিনহাজুল ইসলাম রাজারহাটের ঘড়িয়ালঙাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এই সদস্য জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। পানিতে ডুবেছে দুইশতাধিক ঘরবাড়ি। অনেকে স্থানীয় স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। 


বিজ্ঞাপন


অপর দিকে তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় রংপুর ও লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তরাঞ্চলেও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেই পানি এখন নিচের দিকে নামছে। ফলে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আশপাশের এলাকায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ১৫ জেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা আশা করছেন— আগামী দু’দিন উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা আপাতত নেই।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানির লেভেল খানিকটা বেড়েছে। গঙ্গা ও পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে। তিস্তায় পানির লেভেল কমে আসছে। আশা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আর ভারী বৃষ্টিপাত হবে না। এতে লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হলে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সোমেশ্বরী ও যাদুকাটা ও সারিগোয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টি হলে সেই পানিও নদীপথে দেশের ভেতর দিয়ে নামবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র— প্রায় ১০৯টি নদীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। গত ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ৭৯টি নদীর পানি বেড়েছে। কমেছে ২৮টিতে। তবে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে একটি নদীর পানি।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভারী বৃষ্টি হবে। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসবে। অন্যান্য এলাকায়ও আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত কমে আসবে বলে আশা করছি। আবার সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেছেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হলেও সেটা এক দিনের বেশি থাকার সম্ভাবনা কম। এরকম হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না। 

যদিও চলতি মাসেই টানা ক’দিনের ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অনেক এলাকা বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল। অতীতে এসব এলাকায় এরকম বন্যা দেখা যায়নি।

কেন নিয়মিত বন্যা হয় উত্তরাঞ্চলে?
বন্যা ঠেকাতে উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জের অনেক এলাকায় নানারকম প্রকল্প বা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বন্যা পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিবছর এসব এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয় অনেক।

পড়ুন: বৃষ্টি কবে কমবে জানাল আবহাওয়া অধিদফতর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, প্রতিবছর বন্যা হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত নদীগুলোর নাব্যতা কমে অনেক জায়গায় চর পড়ে গেছে। শুকনোর সময় প্রায় হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষার সময় এসব নদীতে উজান থেকে ১ লাখ কিউসেকের বেশি পানি চলে আসে। বিশেষ করে শুষ্ক সময়ে উজানে ভারতের অংশে পানি সরিয়ে নেওয়া হয় আর বর্ষার সময় সেই পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে বর্ষা আসলে নদীর গতিপথ পাল্টে যায়, দুকুল উপচে পানি পড়ে। এতে অল্প বৃষ্টি হলেই বা নদীতে পানি বাড়লেই বন্যা দেখা দেয়। 

তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মতো নদীগুলোর উজানে অনেক স্থানে মাইনিং হচ্ছে, সেসব কারণে নদীতে প্রচুর পলি, বালু বা পাথর এসে পড়ে। এগুলো পানির সাথে সাথে ভাটির দিকে চলে আসে। ড্রেজিং করেও পুরোপুরি মোকাবেলা করা যায় না।

প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলছেন, আমরাও অনেক জায়গায় জলাশয় ভরে ফেলছি, দূষণ আর দখলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হলে পানি সহজে বের হতে না পেরে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এবার চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে আমরা যা দেখেছি, গত বছর সিলেটেও এমন দেখা গেছে। সেখানেও দেখা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পর পানি নদী দিয়ে নামতে না পেরে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে নদীর নাব্যতা রক্ষা করা, দূষণ আর দখল ঠেকানোর ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আরও এক দিন বৃষ্টি হওয়ার পর কমে যাবে। ফলে আপাতত নদীতে পানি বাড়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আবার বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর