সাপ একটি নিরীহ প্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপের গুরুত্ব অপরিসীম। সাগর মোহনার ভাটির দিকের দেশ বলে এখানে একসময় সাপের অসংখ্য প্রজাতি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সাপ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের অযাচিত ভয় ও অজ্ঞতার কারণেই আমরা এই প্রাণিটিকে দেখলেই প্রাণঘাতী মনে করে মেরে ফেলি। কিন্তু পশ্চিমা বা উন্নত বিশ্ব এখন এই সাপের বিষকে কাজে লাগাচ্ছে নতুন এক অর্থনৈতিক রফতানি পণ্য হিসেবে।
খাদ্যশৃঙ্খলে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সাপ। ক্ষতিকর রোডেন্ট জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণে ফসল রক্ষা করে, প্রাণীবাহিত সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমায়। সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা হয়। দেশের আনাচে কানাচে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যে মাত্র আট থেকে নয়টি প্রজাতির বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে গোখরো (খৈয়া গোখরো, রাজ গোখরো, পদ্ম গোখরো), কালাচ, ছোট কৃষ্ণ কালাচ, বড় কৃষ্ণ কালাচ, ওয়ালস ক্রেইট, শাখামুটি, চন্দ্রবোড়া, পিট ভাইপার, লালগলা ইত্যাদি। এছাড়া অল্প বিষধর সাপের মধ্যে আছে কালনাগিনী, ফণিমনসা, খয়রি ফণিমনসা, মেটে সাপ, লাউডগা, ডগ ফেসড ওয়াটার স্নেক ইত্যাদি। নির্বিষ সাপ হলো বেত আচড়া, দুধরাজ, ব্রাহ্মণী দুমুখো সাপ, জলঢোঁরা, পেইন্টেড কিলব্যাক, হেলে, উদয়কাল, ঘরগিন্নি সাপ, ইন্দো চাইনিজ দাঁড়াশ, রেড কোরাল কুকরি ইত্যাদি। দেশে ব্ল্যাক ব্যান্ডেড সি স্নেক, ইয়োলো লিপেড সি স্নেক, হুক নোসড সি স্নেক, ডাউডিন সি স্নেক ইত্যাদি সামুদ্র্রিক সাপও রয়েছে।

বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১০০ মিনিট অত্যন্ত মূলবান। কোনোভাবেই সাপুড়ের কাছে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সাপুড়ে কখনো বিষ নামাতে পারে না। তাই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কামড়ের জায়গার ওপরে কোনোভাবেই রশি দিয়ে বাঁধা যাবে না। গামছা বা ওড়না দিয়ে এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে সহজেই বাঁধনের ভেতর দিয়ে আঙুল ঢুকানো যায়। রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধলে সেই জায়গায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সাপের বিষের চেয়ে বেশি যন্ত্রণা হতে পারে। আর কোনো কারণে এ বাঁধন ৬ ঘণ্টার বেশি থাকলে সেই জায়গা পঁচে গিয়ে অঙ্গহানি ঘটতে পারে।
এছাড়াও সাপে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব হাতের আংটি, চুরি, কানের দুল এগুলো খুলে ফেলতে হবে। কেননা, বিভিন্ন সাপের কামড়ে সেই স্থান ফুলে যায়।
বিজ্ঞাপন
সাপের কামড় বিষয়ে প্রথম জাতীয় জরিপে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ৬ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর কামড়ের শিকার হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যান মাত্র ৩ শতাংশ।
আমাদের দেশে সাপ নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার রয়েছে। আজ ১৬ জুলাই বিশ্ব সাপ দিবস। এই দিনে চলুন জেনে নেওয়া যাক সাপ নিয়ে কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে-
বীণ বাজিয়ে সাপ আনা, সাপ দুধ খায়, দাঁড়াশ সাপ মারাত্মক বিষধর-লেজ দিয়ে বাড়ি দিলে মানুষ বাঁচে না, বাড়ি দেওয়ার স্থান পচে যায়, সাপ মানুষকে চিনে রাখে, আঘাত করলে রাতে বাসায় এসে কামড় দেয়, সাপের এক চোখ অন্ধ, সাপ কামড়ালে ওঝা ভালো করতে পারে ইত্যাদি হলো কুংসস্কার।
এসব কুসংস্কারের নগ্ন শিকার সাপ। একইসঙ্গে বর্তমানে নগর উন্নয়ন, যান্ত্রিক সভ্যতার বহুমুখী আগ্রাসনে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো সাপও ঝুঁকির মুখে। অকারণে সাপ মারা কোনো বাহাদুরি নয় বরং কাপুরুষত্ব। সাপ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

